বুধবার, জুলাই ১৬, ২০২৫

রূপসীর ঝর্ণা বিলাস

মো. মুরাদ হোসেন

চট্টগ্রামের পাহাড়িঘেরা সুবজায়নের রূপ-প্রকৃতির সৌন্দর্য বিমোহিত করে প্রকৃতিপ্রেমীদের। নিভু নিভু করে চলতে থাকা পাহাড়ি ঝর্ণাধারাগুলো প্রাণের সজীবতা ফিরে দিতে হাতছানি দিয়ে ডাকে ভ্রমণপিপাসুদের। তেমনি একটি অনিন্দ্য সুন্দর ভ্রমণস্থান বড় কমলদহ রূপসী ঝর্ণা। এর মনোমুগ্ধকর রূপের কারণে স্থানীয়রা একে ডাকে রূপসী ঝর্ণা নামে। এটি চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের ওয়াহিদপুর ইউনিয়নের বড়কমলে অবস্থিত।

রূপসী ঝর্ণার সৌন্দর্য ও স্বচ্ছ জলের শীতল পরশ নিতে আমরা চবির (চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়) কয়েকজন ভ্রমণপিপাসু শিক্ষার্থী ক্যাম্পাস থেকে বেরিয়ে পড়ি। ক্যাম্পাস থেকে আসি ভাটিয়ারী। সেখান থেকে বাসে করে মিরসরাইয়ের বড় দারোগার হাঁট। বাসে কোরাস গানের আসর দেয় আনন্দঘন ভ্রমণের সূচনা। বড় দারোগা হাঁটে সকালের নাস্তা শেষ করে পাঁচ মিনিট হেঁটে রূপসীর ঝর্ণা স্পটের নিকট পৌঁছাই। সেখানে থাকা একটি হোটেলে কথা বলে, সাথে থাকা ব্যাগ ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র হোটেলে রাখি এবং দুপুরের খাবার অর্ডার করে ঝর্ণার দিকে রওনা দেই।

দুপাশে সুবিশালভাবে দন্ডায়মান সবুজ পাহাড়ের মাঝে স্বচ্ছ পানির শীতল জলধারা দিয়ে হাঁটার সময় অনন্য অনুভূতি সবাইকে উদ্বেলিত করে। রূপসী ঝর্ণার রয়েছে ৩টি আলাদা আলাদা ধাপ। যেমন- বড় কমলদহ, ছাগলকান্দা ও পাথর ভাঙ্গা। প্রথম ধাপের ঝর্ণাটি বিশাল একটি ঝর্ণা, যা অনেকটা খাড়া পথ বেয়ে নেমে এসেছে। এটি আসল রূপসীর বাহিরে রূপ। প্রথম ধাপের ঝর্ণাটিতে পৌঁছে সবাই স্বচ্ছ জলধারায় নিজেদেরকে ভিজিয়ে নিই। এই প্রথম ধাপটি বেয়ে উঠলে একটি বড় পাথর রয়েছে। ১০ ফিটের খাড়া এই পাথরটা বেয়ে উপরে উঠে আরো চমৎকার সৌন্দর্য নজরকাড়ে। সম্মুখে রয়েছে বৃক্ষ ফুল লতাপাতা ঘেরা বিশাল ঝিরিপথ। ঝিরিপথ দিয়ে হাঁটতে গিয়ে মনে হয়েছে যেন কোন গুহার মধ্য দিয়ে হেঁটে হেঁটে রহস্যভেদ করছি আমরা। ঝিরিপথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে পাওয়া যাবে দুটি পথ। এক পথের আকার বড়, আরেক পথের ছোট। বড় পথ ধরে একটু গেলেই রূপসীর মূল ঝর্ণা।

অনেক দূর থেকে শোনা যাচ্ছিল ঝর্ণার ধ্বনি। এই ধ্বনি ও জলধারা যে শুনেছে-দেখেছে সে বারবার যেতে চাইবে রূপসীর কাছে। পথে পথে নানারকম পাখ-পাখালির ডাকাডাকি, ওড়াওড়ি। রূপসীর জলধারা ভ্রমণের ক্লান্তি মুছে দিয়েছে। ৫০ ফিট উপর থেকে বয়ে আসা ঝর্ণার সুমধুর ধ্বনি আর রূপসীর জৌলুশ যে কাউকে মুগ্ধ করবে। পাথর বেয়ে পড়া স্বচ্ছ জলের অমিয় ধারা আপ্লুত করে দিয়েছে আমাদের ভ্রমণপিপাসু সকলকে। রূপসীর রূপের সুধায় পরিতৃপ্ত করেছে আমাদের তরুণ মনকে। প্রায় চার ঘন্টার ঝর্ণা ভ্রমণ শেষে বড়কমল এলাকার কুড়ে হোটেলে এসে আমরা ফ্রেশ হয়ে দুপুরের খাবার খাই।

গ্রামের হোটেলে ভ্রমণপ্রেমীদের জন্য সুব্যবস্থা ও নিরাপত্তার বিষয়টি খুবই লক্ষণীয়। ফেরার পথে সীতাকুণ্ডের গুলিয়াখালী বিচে সূর্যাস্ত অবলোকন করে ক্যাম্পাসে ফিরলাম।

শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

Share post:

spot_imgspot_img